আসলে তো সকলেই ভালোবাসার কাঙাল।।🍁🍂


চাঁদনী এক কাপড়ে বাড়িয়ে এসেছিলো, শুভ্রর হাত ধরে,তার বাবার তিন তলার মহল থেকে ।চাঁদনী তার জীবনসঙ্গী হিসেবে তার বাবার পছন্দ করা বড়লোক বিজনেস ম্যান কে মেনে নিতে পারেনি।
চাঁদনী তার মাকে হারিয়েছে ছোটবেলায়,এক অ্যাকসিডেন্ট এ ,সে তার বাবা কেও পাইনি ঠিক মত আপন করে, হ্যাঁ তার বাবা তাকে রাজকন্যার মতই রাখে কিন্তু মনের আনন্দে দুটো কথা বলার ফুরসৎ মেলেনা বাবার সাথে।
তার বাবা সারাদিন ব্যস্ত বিজনেসে।
এই মন খারাপের জীবনে শুভ্রই তার কাছে মন ভালো করার হদিস আনে,এক আকাশ আনন্দকে মেলে ধরে তার সামনে….🌷
চাঁদনীর সাথে শুভ্রর দেখা কলেজএর ফ্রেশারসে।চাঁদনী ছিল বাংলা ডিপার্টমেন্ট এর নতুন ছাত্রী। আর শুভ্র ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
চাঁদনীর লাল পাড়,সোনালী জরি দেওয়া সাদা শাড়ি,খোলা চুল ,খোলা আঁচলের ওপর ছড়িয়ে গেছে,কানে এমব্রইডারি দুল,আর কপালে একটা কালো টিপ,হালকা গোলাপি ঠোঁটের মিষ্টি হাসি,শুভ্রকে এক রোমান্টিক জগৎ এ নিয়ে যায়।কিন্তু প্রথম দেখাতেই এরকম ভাবে বলা যায় না।
শুভ্র খুব ভালো গান গায়। ফ্রেশার্সের দিন, শুভ্রর রবীন্দ্র সঙ্গীত দিয়েই উদ্বোধন হবে অনুষ্ঠান ।
শুভ্র স্টেজে উঠে এক ঝলক দেখে নেই চাঁদনীকে ,তারপর সে তার গান শুরু করে "কি করিলে বলো পাইব তোমারে"…….♥️
চাঁদনীর চোখের দিকে তাকিয়ে তার গান যেন আরো প্রেমময়,সুরেলা হয়ে উঠলো।
শুভ্রর গান শুনে চাঁদনীর ও খুব ভালো লাগে।চাঁদনীর ও নাচ ছিল তারপরেই ।সে তার মায়া বন বিহারিনী র সুরে স্টেজ আলোকিত করলো নৃত্যের তালে তালে।
ফ্রেশার্স শেষ হতে বেশ রাত হয়ে গেছিলো ।চাঁদনী অপেক্ষা করছিল তার বাবার গাড়ির আসার জন্য ।অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও গাড়ি এলোনা ,তারপর ফোন করে জানে যে তার বাবার একটা জরুরি মিটিং পড়ে গেছে, অগত্যা তাকে একাই বাড়ি ফিরতে হবে।
চাঁদনী র বাড়ির পথেই শুভ্র রও বাড়ি।চাঁদনী বাড়ির পথে হাঁটা শুরু করবে তখন সে শুভ্র কে দেখতে পায়।চাঁদনী কোনোদিন একা বাড়ি ফেরেনি এত রাত্রে।তার খুব ভয় হচ্ছিল।তখন সে শুভ্র কে ডাকে।তারা সেদিন একসাথেই বাড়ি ফেরে।পথে আলাপ পর্ব শেষ করে আরো অনেক গল্প করে তারা।তারপর কলেজেও মাঝে মাঝে দেখা হতো তাদের,এইভাবেই একে অপরকে চিনতে শুরু করে,আর একে অপরকে ভালোবাসাই আবদ্ধ করে।🌼
তাদের প্রেমে কোনো আতিশয্য ছিলনা। খুবই সাদামাটা ছিল তাদের প্রেম।শুভ্র মধ্যবিত্ত পরিবারের,চাঁদনীর মত এত বাড়ি,গাড়ি ,চাকচিক্য কিছুই ছিলনা,কিন্তু ছিল একটা মস্ত বড় মন,যা চাঁদনীকে শুভ্রর কাছে এনেছিল।তারা কোনোদিন শপিং কমপ্লেক্সে যাইনি ঠিকই,কিন্তু শিল্প মেলাতে গেছে বহুবার,সেখানে শুভ্র তার সাধ্যমতো পোড়ামাটির মালাতে সাজিয়েছে চাঁদনীকে ,খোঁপাতে এক গুচ্ছ বেলি ফুলের মালা আটকে দিয়ে বলেছে ,ফুলে তোমাক দারুন মানায়। তারা রেস্টুরেন্ট গিয়ে নানারকম খাবার খাইনি ঠিকই ,কিন্তু পাড়ার মোড়ে ফুচকা আর পাপড়িচাটে, অনবদ্য স্বাদ নিয়েছে।
তারা নিজেদের মনে,প্রাণে ,গানে নিজেদের মত করে ভালোবেসেছে।🍂
চাঁদনী তার একঘেয়ে ,একলা জীবনে ,শুভ্রকে পেয়ে,যেনো এক আকাশ আনন্দ সঞ্চয় করেছে।তার দুঃখ গুলো শুভ্র বাকসো বন্দী করে দূর সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়ে এসেছে।
চাঁদনী র পড়া শেষ হবার পর তার বাবা তার বিয়ে ঠিক করেন এক বিজনেস পার্টনার এর ছেলের সাথে সেও এক বড় বিজনেস ম্যান।
চাঁদনী তার বাবাকে শুভ্রর কথা বলে ,কিন্তু তার বাবা মধ্যবিত্ত শুভ্রকে মেনে নেননি।
চাঁদনী সেদিনই বেরিয়ে আসে তার চাকচিক্যে ভরা,দামী গাড়ি,বাড়ি ছেড়ে ,তার বাবাকে ছেড়ে ,শুভ্রর হাত ধরে , শুভ্রদের বাড়িতে।
শুভ্রর মা,বাবা চাঁদনীকে মেয়ের মত করে ভালোবাসেন।শুভ্র আর চাঁদনী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।শুভ্র তখনো কোনো চাকরি পায়নি,সে চাকরির চেষ্টা করছিল।চাঁদনী শুভ্রকে সবসময় ভরসা দিয়ে এসেছে।চাঁদনী আর শুভ্র একটা স্কুল খুলেছে,সেখানে শুভ্র গান শেখায় আর চাঁদনী নাচ শেখায়।শুভ্র এরইমধ্যে একটা প্রাইভেট সেক্টরে চাকরিও পেয়ে গেছে । এতেই তাদের অনায়াসেই দিন কাটে।চাঁদনী শুভর মায়ের কাছে সেই ভালোবাসা পেয়েছে যে ভালোবাসার অভাব সে ছোট থেকে অনুভব করেছে। শুভ্রর বাবার সাথে সে গল্প করার অনেক সময় পেয়েছে যে সময় সে তার বাবার কাছে পায়নি।🍁
তাদের বাড়ি হইতো অনেক বড় নয় ,তবুও ভালোবাসায় পূর্ণ।সে শুভ্রের সাথে বিশেষ দিনে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে যায়না,কিন্তু তাদের বাগানের পাশের বারান্দায় ,মাঝে মাঝেই মোমবাতির আলোয় সাজিয়ে তোলে,দুজনের পরম প্রেমে একে অপরের কাঁধে মাথা এলিয়ে , রবীন্দ্রসঙ্গীতে ডুবে যায়।একে অপরকে প্রতি পারতে পারতে অনুভব করে।চাঁদনী সব ছেড়ে এসে এক অনাবিল শান্তির নীড় পেয়েছে।🏵️
আসলেই এরকম একটা ভরসার ভালোবাসার কাঁধ সকলের জোটেনা,যার কাঁধে দিনের শেষে পরম দুঃখেও সুখ অনুভব হয়,আর যারা পায়,তারা তা জন্ম জন্মান্তরেও ভোলেনা।
আসলে তো সকলেই ভালোবাসার কাঙাল।।🍁🍂

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Recent Posts