একটি ভয়ঙ্কর রাতের তিক্ত অভিজ্ঞতা


 

আমি আজ যে ঘটনাটি শেয়ার করতে চাই। সেটা আমার একটি ভয়ঙ্কর রাতের তিক্ত অভিজ্ঞতা। ঘটনাটি ঘটে ২০১৫ সালের শেষের দিকে, সময়টি ছিল শীতকাল। আমাদের এলাকাটি গ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত, সেদিন আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরের একটা গ্রামে মেলার আয়োজন করা হয়। এখবর জানতে পেরে আমি আর আমার দুই ভাই সেখানে যেতে চাই। যথারীতি আমরা সন্ধ্যার সময় মেলায় যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়। মেলার মাঠে পৌছাতে একটু রাত হয়। মেলায় গিয়ে আমার কলেজের একটা বন্ধুকে পাই, তার কাছ থেকে জানতে পারি, সেখানে কুষ্টিয়া থেকে নাকি লালন সংগীতের দল আসবে। আমি সেখানে থাকার ইচ্ছা করলে আমার ভাইয়েরা আমাকে একা রেখে বাসায় চলে যায়। আমি আর আমার বন্ধু লালন সংগীত শুনতে যায়। গানের অনুষ্টান যখন শেষ হয়, তখন রাত প্রায় ১ টা বাজে। আমার বন্ধুটি তাদের বাসায় থাকতে বললেও, আমার টিউশনির জন্য বাসার দিকে রওয়ানা দেই। মেলার স্থান থেকে একটি গাড়িতে উঠলেও আমাদের বাসা থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে একটি বাজারে আমাকে নামিয়ে দেই। বাজার থেকে আমাদের বাসায় আসার দুটি পথ আছে। একটি ইটের তৈরি রাস্তা, অন্যটি একটি মেঠোপথ। আমি যখন কোন রাস্তাটি দিয়ে বাসায় যাব সেটা ভাবছি, তখন মেঠো পথের ঐইদিক থেকে প্রচন্ড শিয়ালের ডাক শুনতে পেলাম। তাছাড়া ঐই পথটি নিয়ে অনেক কথা শুনা যায়। আমার প্রতিবেশী এক চাচা রাত্রে ঐই পথ দিয়ে বাসায় আসার সময় প্রচন্ড ভয় পেয়ে মারা যায়। তিনি নাকি অনেক বড় আকৃতির মানুষ দেখতে পান, যেটা অনেক উচু একটা গাছের সমান। তাছাড়া মাঝে মাঝে সেখানে নাকি গলাকাটা ঘোড়া দেখা যেত, সেই ঘোড়াগুলোর গলা নেই কিন্তু দৌড়ে বেড়াতো। এসব কথা মনে পড়তে, আমি ইটের রাস্তা দিয়ে বাসার দিকে যাওয়া শুরু করি। প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা যাবার পরে একটা তিন রাস্তার মোড় আছে। সেখানে অনেক পুরাতন একটা আম গাছ রয়েছে। বাসায় যাবার সময় আম গাছটার নিচ দিয়ে যেতে হয়। আম গাছটি অনেক পুরাতন হওয়ায়, সেটা নিয়ে অনেক ভৌতিক গল্প আছে। দূর থেকে যখন আমি আম গাছটি দেখতে পাই, ভয়ে আমার গায়ের লোমগুলি দাড়িয়ে যায়। গাছটি নিয়ে যত ভৌতিক গল্প শুনেছি, সব কিছু মনে পড়তে থাকে। আমি গাছ থেকে দূরে দাড়িয়ে ভাবতে থাকি, কিভাবে আমি আমগাছ তলার পথটুকু পাড়ি দিব। আমার হাতে একটা টর্চ লাইট থাকলেও আমি ভয়ের জন্য পথটুকু পাড়ি দিতে সাহস পাচ্ছিলাম না। অনেক সময় দূরে দাড়িয়ে থাকার পরে, এক পা, দুই পা করে, আমি গাছের নিচেই আছি। যতই আমি গাছের কাছে আসি, ততই যেন আমি একটা কান্নার মতো চাপা শব্দ শুনতে পাই, কোথা থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে সেটা দেখার জন্য আমি চারিদিকে টর্চ লাইটের আলো ফেলি কিন্তু আমি কাউকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। তখন একটা দমকা হাওয়া আমার গায়ে লাগলো। ভয়ে আমার শরীরের লোমগুলো কাটা দিয়ে উঠলো। কি করবো কিছু বুঝতে পাচ্ছিলাম না। গাছটির উপর টর্চের আলো ফেলতেই দেখলাম গাছটি বাতাসে দুলছে, কিন্তু পাশের গাছগুলা সব নিশ্চুপ, চারিদিকে কোন বাতাস নাই। গাছটির উপর টর্চের আলো ফেলে রাখলাম, কি হচ্ছে সেটা দেখার জন্য। হঠাৎ পেছন থেকে আমার ঘাড়ের উপর কে যেন একটা ঠান্ডা হাত রাখলো। ভয়ে আমি যেন বরফে পরিণত হয়েছি। পিছনে ফিরে দেখবো কে, সেটা দেখার কোনো শক্তি আমার নাই। আমার সম্পূর্ণ শরীর যেন অচল হয়ে গেছে। আমি গাছটির নিচে দাড়িয়েই রইলাম,কতক্ষণ ছিলাম বলতে পারবো না। আস্তে আস্তে আমার শরীরের অবশ ভাবটা কমতে থাকে তখন আমি চারিদিকে টর্চের আলোয় কাউকে দেখতে পাইনা। ভয়ে আমি চলার শক্তি হারিয়ে ফেলি। গাছের দিকে টর্চের আলো ফেলে আমি পেছন দিকে এক পা দুপা করে যেতে থাকি। চারিদিকে বার বার টর্চের আলো ফেলি। মনে হচ্ছিল কেউ যেন আমার পেছনে দাড়িয়ে আছে। অনেক কস্টে গাছটি পেরিয়ে বাসার দিকে যেতে থাকি। বাসার প্রায় কাছে চলে আসলে, হঠাৎ দেখি রাস্তাটি সম্পূর্ণ ব্লক করে একটা অনেক বড় কালো কুকুর শুয়ে আছে, যা দেখে ভয়ে আমার প্রাণটা বুজি বের হয়ে যাচ্ছিল। এত বড় কুকুর হয় কি? কারণ রাস্তাটি প্রায় ৮ ফুট চওড়া, সেই হিসাবে কুকুরটিও তারই সমান। রাস্তা পার হবার জন্য, আমি কুকুরটির দিকে লাইটের আলো ফেলি যাতে কুকুরটি যেন রাস্তা থেকে উঠে যায়। কিন্তু কুকুরটি যেন গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। কুকুরটিকে আঘাত করবো সে সাহস ও আমার ছিল না। উপায় না দেখে আমি রাস্তার নিচে দিয়ে নেমে রাস্তা পার হয়। কুকুুরটিকে ক্রস করার পর পেছনের দিকে তাকানোর সাহস আর ছিল না। আমাদের বাড়ির প্রায় কাছে চলে আসি, একটা পুকুর পার হলেই আমাদের বাসা। পুকুরের দিকে লাইটের আলো ফেলতেই দেখি, পুকুরের ঠিক মাঝে, অনেক বড় আকৃতির কালো রংয়ের কিছু একটা শুন্যে ভাসতেছে। এটা দেখার পর আমি দৌড়ে বাসার ভিতর চলে যায়। এটাই ছিল আমার ঘটনা।


*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Recent Posts