পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফ কিভাবে তৈরি হয় এবং এর ইতিহাস । History of Kiswat Al-Kabah & Manufacturing Process

 

পবিত্র কাবা শরীফের কালো গিলাফ যাকে আরবিতে “Kiswat al-ka’bah” বলা হয়ে থাকে। মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র কাবা শরীফ এক আবেগ অনুভূতি ভালোবাসা এবং সম্মানের জায়গা। পবিত্র কাবার গায়ে ঠাঁই পেয়ে সামান্য এক বস্ত্র খন্ড ও হয়ে উঠে পবিত্রতার প্রতীক। শিল্পীর সুনিপুন হাতে তৈরি ডিজাইন এবং কালো রং প্রতিটি মানুষের মনে এই পবিত্র কালো গিলাফ এক অন্যরকম কৌতুহল সৃষ্টি করে।

পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফ তৈরির ইতিহাস:

পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফের কথা শুনলেই আমাদের চোখের সামনে হয়তো ভেসে উঠে শিল্পীর সুনিপুণ হাতে সোনালী এবং রুপালি সুতায় ঢেউখেলানো বিভিন্ন কোরআনের আয়াত সম্বলিত কালো রংয়ের একখন্ড মায়াবী কাপড়। কিন্তু ব্যবহারের শুরু থেকেই কি কাবা শরীফের গিলাফ এরকম ছিল? না কাবা শরীফের গিলাফ তৈরি এবং ব্যবহারে রয়েছে এক বিবর্তনের ইতিহাস। যুগে যুগে বিভিন্ন খলিফা এবং সৌদি বাদশার আমলে এই পবিত্র গিলাফ তৈরিতে, রংয়ের এবং ব্যবহারের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। প্রথম দিকে গিলাফের রং হতো সাদা পরবর্তীতে সবুজ, লাল এবং সর্বশেষ কালো রংয়ের গিলাফ ব্যবহার করা হয়।

বাদশাহ আবদুল আজিজ ক্ষমতায় আসার পরে পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফ তৈরি করার জন্য একটি আধুনিক কারখানা স্থাপনের প্রয়োজন বোধ করেন এবং কাবা শরীফের গিলাফ তৈরির জন্য ১৯২৬ সালে মক্কা শহরের অদূরে “ king Abdul Aziz Complex” নামক একটি কারখানা স্থাপন করেন।

বর্তমানে পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফ যেভাবে তৈরি হয়:

১৪ মিটার লম্বা এবং ১০১ সেন্টিমিটার চওড়া ৪৭ পিছ কাপড় জোড়া দিয়ে মোট পাঁচ খন্ড কাপড় বানানো হয় যার চার খন্ড পবিত্র কাবা শরিফের চারদিকে থাকে এবং পঞ্চম খন্ডটি জোড়া দেওয়া হয় কাবা শরিফের দরজার সামনে। এই পাঁচ খন্ড কাপড় তৈরি করতে প্রায় ৬৭০ কেজি উন্নত মানের সিল্ক ১২০ কেজি সোনার সুতা এবং ১০০ কেজি রুপার সুতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।







গিলাফের গায়ে ক্যালিওগ্রাফি করে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াত খচিত থাকে। স্বর্ন খচিত অক্ষর গুলো সোনালী আভায় উদ্ভাসিত হয়। দুইশোরো অধিক ক্যালিওগ্রাফার নয় মাসের ও অধিক সময় নিয়ে এই ক্যালিওগ্রাফি করে থাকে। প্রথমে ঝার্নীক কালি দিয়ে ক্যালিওগ্রাফির আউটলাইন দেওয়া হয় তারপর কারিগররা হরফের ভিতর রেশমি সুতার মোটা লাইন বসিয়ে স্বর্ন এবং রুপার সুতা দিয়া বিশেষ পদ্ধতিতে হরফ ফুটিয়ে তুলেন। আগে এই ক্যালিওগ্রাফির কাজ শিল্পীর সুনিপুণ হাতে করা হয়ে থাকলেও বর্তমানে কিছু আধুনিক মেশিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে এই ক্যালিওগ্রাফিতে। গিলাফ তৈরির প্রতিটি ধাপ ডাইং ,উইভিং,প্রিন্টিং এবং ম্যানুফ্যাকচারিং এ অত্যন্ত দক্ষতা এবং পবিত্রতা রক্ষা করা হয়ে থাকে। বিশেষ একটি প্রক্রিয়া অনুসরন করে এই গিলাফ তৈরি করা হয় যা অধিক তাপমাত্রা সহন করতে পারে যাতে উচ্চ তাপমাত্রার রোদে গিলাফের রং এবং কাপড়ের গুণাবলি নষ্ট না হয়। পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফ তৈরিতে প্রায় ১৭-২০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে থাকে সৌদি সরকার।

প্রতিবছর নয় জিলহজ্জের দিন হাজিরা যখন আরাফাতের ময়দানে থাকে তখন পবিত্র কাবার গায়ে নতুন গিলাফ পড়ানো হয় ১৬০ জন কর্মী এই কাজে নিয়জিত থাকে। পুরনো গিলাফটি কেটে টুকরো করে বিভিন্ন মুসলিম সরকার এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপহার দেওয়া হয়।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Recent Posts