ভারতের ভ্যাক্সিন নিয়ে কিছু অবাঞ্চিত বিতর্ক!

 

সম্প্রতি ভারত দুটো ভ্যাক্সিনকে অনুমোদন দিয়েছে,



১. কভিডশিল্ড (Covidshield)

২. কোভ্যাক্সিন (Covaxin)


সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশকে যে ভ্যাক্সিনটি পাঠিয়েছে সেটি হচ্ছে 'কভিডশিল্ড', যার মূল প্রস্তুতকারক ভারত (Bharat Biotech) নয়, বরং এই ভ্যাক্সিনের মূল প্রস্তুতকারক যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত AstraZeneca কোম্পানী। কভিডশিল্ড ভ্যাক্সিনটির পরীক্ষামূলক ট্রায়াল শুরু হয়েছিল গত বছর (২০২০ এর) ২৩ এপ্রিল থেকে, এবং ডিসেম্বরের শুরু থেকেই এই ভ্যাক্সিনের সফল কার্যকারিতার তথ্য বিভিন্ন পিয়ার রিভিউড জার্নালে (ল্যানসেট) প্রকাশিত হতে শুরু করে।


অন্যদিকে 'কোভ্যাক্সিন' নামক ভ্যাক্সিনটি আপাদমস্তক প্রস্তুত করা হয়েছে ভারতের 'ভারত বায়োটেক (Bharat Biotech)' কোম্পানীতে যা বাংলাদেশে পাঠানো হয়নি।


.

কভিডশিল্ড কেন ভারত হয়েই বাংলাদেশে এসেছে?


কভিডশিল্ডের মূল প্রস্তুতকারক কোম্পানী AstraZeneca পৃথিবীর যত মধ্য আয়ের উন্নয়নশীল দেশে ভ্যাক্সিনের সংরক্ষণ প্রক্রিয়া বিবেচনা করে স্বল্প খরচে ভ্যাক্সিন পৌছানোর একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত করতে তারা ৩ টি প্রাইভেট ভ্যাক্সিন কোম্পানীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। প্রথমটি CEPI, দ্বিতীয়টি GAVI এবং তৃতীয়টি Serum Institute of India।


আপনারা হয়ত জানেন, Serum Institute of India ভারতের একটি প্রাইভেট ভ্যাক্সিন কোম্পানী যা এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভ্যাক্সিন কোম্পানী। (গুগলে চেক করুন)।


অক্সফোর্ডের AstraZeneca কোম্পানীর সাথে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর চুক্তি বা লাইসেন্স এগ্রিমেন্ট ছিল এইরকম, তারা সম্পূর্ণভাবে অক্সফোর্ডের কার্যপ্রণালী অনুসরণ করে যার যার ল্যাবে ভ্যাক্সিন প্রস্তুত করে স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে ভ্যাক্সিন পৌছে দেবে। এতে পরিবহণ ও সংরক্ষণ কস্ট সহ বেশ খানিকটা আনুষঙ্গিক খরচ কমে যাবে। এছাড়া কভিডশিল্ড ভ্যাক্সিনটি মাত্র ৪ ডলারের সাশ্রয়ী ভ্যাক্সিন যা আমাদের বাসা-বাড়ীর সাধারণ ফ্রিজেই সংরক্ষণ করা যাবে।


.

ভারত কেন কোভ্যাক্সিন বাংলাদেশে পাঠালো না?


বিবিসির তথ্য অনুযায়ী কোভ্যাক্সিন নামক ভ্যাক্সিনটি সম্পূর্ণভাবে কার্যকর কি না, তা এখন পর্যন্ত পরীক্ষাধীন রয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ নিশ্চিত না হয়ে সেই ভ্যাক্সিন এক্সেপ্ট করেনি। তবে আগামী ফেব্রুয়ারীর পরে কোভ্যাক্সিনের ট্রায়াল রিপোর্ট প্রকাশিত হলে বাংলাদেশ যাচাই-বাছাই করে তার সিদ্ধান্ত জানাবে, যে আমরা কোভ্যাক্সিন নেব কি না।


.

বাংলাদেশকে যে যা দেয়, তা-ই কি নিয়ে নেয়?


অবশ্যই না। ২০২০ এর অক্টোবরে চীনের একটি প্রাইভেট কোম্পানীর ভ্যাক্সিন পর্যাপ্ত যাচাই বাছাইয়ের অভাবে রিজেক্ট করে দিয়েছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ত ভারত যখন তাদের নিজস্ব কোভ্যাক্সিন বাংলাদেশে ট্রায়াল দিতে চেয়েছিল, তখন ভারতকেও রিজেক্ট করেছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে যে যা দিচ্ছে তাই নিয়ে নিচ্ছে না, বরং ভ্যাক্সিন গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি সিস্টেমেটিক পদ্ধতিতে যাচাই-বাছাই করেই এগুচ্ছি আমরা।


.

রয়টার্স নিয়ে এত মিথ্যাচার কেন?


কিছু মানুষ গুজব ছড়াচ্ছেন, রয়টার্স নাকি বলেছে, বাংলাদেশে ট্রায়াল দেওয়ার জন্য ভারত ভ্যাক্সিন পাঠিয়েছে। ঘেটে দেখুন, রয়টার্স এটি বলেনি, বরং রয়টার্সের ২১ জানুয়ারীর প্রতিবেদনের টাইটেলটি ছিল, "বাংলাদেশে ট্রায়াল দেওয়ার জন্য ভারত তাদের নিজস্ব কোভ্যাক্সিন পাঠাতে চায়।"


মূল নিউজটি হল, হ্যাঁ ভারত তা চেয়েছিল, তবে বাংলাদেশ তা রিজেক্ট করে দিয়েছে। ভারত সম্প্রতি যে ভ্যাক্সিনটি (কভিডশিল্ড) বাংলাদেশে পাঠিয়েছে তা ভারতের নিজস্ব নয়, এবং তার ট্রায়াল হয়ে গেছে কয়েক মাস আগেই। ইংরেজিতে কাঁচা হলেই এ ধরণের গুজব ছড়ানো সম্ভব।


.

এই ভ্যাক্সিনে কি শূকরের চর্বি রয়েছে?


সম্প্রতি AstraZeneca নিজেরা জানিয়েছে তাদের ভ্যাক্সিনে কোন ধরণের শূকরের প্রডাক্ট প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে যুক্ত করা হয়নি। অর্থাৎ কভিডশিল্ড সম্পূর্ণ শুকরের চর্বিমুক্ত।


ইসলামিক ফতোয়া- এক্ষেত্রে একটা বিষয় জানিয়ে রাখি, এ ব্যপারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফতোয়া কাউন্সিল থেকে একটি ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে, আপনার মেডিসিন বা পথ্যে যদি শুকরের কোন অংশ অন্তর্ভূক্ত থাকেও, তা গ্রহণ করা আপনার জন্য বৈধ, কেননা আপনি তা খাদ্য হিসেবে নয়, বরং সুস্থ হওয়ার উদ্দেশ্যে মেডিসিন হিসেবে গ্রহণ করছেন।


.

দশ কথার এক কথা,


ভারত সম্প্রতি যে ভ্যাক্সিনটি বাংলাদেশে পাঠিয়েছে, তা ভারতের নিজস্ব নয়, বত্ব অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাক্সিন। এটির ট্রায়াল অনেক আগেই হয়ে গেছে এবং কার্যকারীতাও প্রমাণিত। এতে কোন শূকরের চর্বি বা গোমূত্র নেই। সুতরাং আপনি নিশ্চিন্তে সে ভ্যাক্সিন ইনজেক্ট করতে পারেন।


লেখা, মুহাম্মাদ শাওন মাহমুদ।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Recent Posts