আমারও পরান যাহা চায়, তুমি তাই গো, তুমি তাই


দিনটা ছিল 22 শে জৈষ্ঠ্য,আষাঢ়ী মেঘেরা আসেনি তখনও চাঁদের ঘরে। তবে আমার ঘরে তুমুল ঝড়বৃষ্টি নিয়ে শ্রাবণ এসেছিল সেদিন। প্রতিদিনের মতো সেদিনও আমরা নাম লিখিয়েছিলাম আমাদের জমানো অনুভূতির কাব্যে। তবে ওটাই মন খারাপি কাব্যের ভূমিকা হয়ে দাঁড়াবে জানতামই না কেও।
জানো অনেক কথা জমিয়ে রেখেছিলাম তোমায় বলবো বলে, কিন্তু হলো কই। শেষ টা যে বড্ড আচমকাই চলে এলো।
" ভালোবেসে বিয়ে"……কথাটা যতটা সরল, আমাদের পরিবারের পক্ষে সেটা মেনে নেওয়া টা তার থেকেও অনেক বেশি কঠিন ছিল। আর শুধুমাত্র নিজের খুশির জন্য, ওই মানুষগুলোর এতদিনের ভালোবাসা উপেক্ষা করে, তাদের কষ্ট দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল না। এই দোলাচল কে আমি খুব ভয় পেতাম। আর তাই…বিশ্বাস করো.…তাই আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম তোমাকে না ভালোবাসতে। কিন্তু ভালবাসা কবেই বা নীয়ম মেনে হয়েছে। তাই ভীষণভাবে চেষ্টা করা সত্বেও আমি পারিনি…পারিনি পরিবারের বেড়াজালে নিজের মন কে বেঁধে রাখতে।
তোমার ভালোবাসা আমায় বাধ্য করেছিল বাধা সত্বেও জিবনে প্রথমবার প্রেমে পড়তে। তারপর তোমার আমার সম্পর্কের স্বীকৃতি র অনিশ্চয়তা আর ভালোবাসার সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার ভয় নিয়েই শুরু করেছিলাম সব। দুজনে মিলে তিল তিল করে সাজিয়েছিলাম"তোমার-আমার' ভালোবাসার শহর।
কিন্তু সেই ভয় টাই সত্যি হলো, আমাদের সাজানো ইচ্ছে গুলো কেমন যেনো তলিয়ে গেলো সেদিন। রাত তখন 11 টা বেজে 10 মিনিট। আমাকে বলা হলো, তোমার সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করতে হবে। কারণ!!……"তোমার বেকারত্ব"। আর ওদের কথা অমান্য করার ফলাফল ছিল দুই পরিবারের মধ্যে অনিবার্য সেই অশান্তি, তিক্ততা, আর ঝামেলা।
তোমাকে সবটা বলতেই তুমি বললে…."তাহলে আমাদের দূরে সরে যাওয়ায় ভালো"।সেদিন খুব করে চাইলেও তোমার সিদ্ধান্তে আমি না করতে পারিনি। কারণ কাগজে কলমে নাবালকের গণ্ডি পেরোলেও আমাদের পায়ের তলার মাটি এতটাও শক্ত হয়নি তখনওযে আমরা ঝামেলা আটকাতে পারবো । আর এরকম কিছু হলে ভবিষ্যতে কিছু বলার সুযোগ টাও আর থাকবে না।
ভবিষ্যতে যোগ্য হয়ে ফিরে আসার জন্য সেদিন ইতি টেনেছেন আমাদের প্রেমের গল্পটায়। একসমুদ্র ঢেও নিষ্ঠুর ভাবে বারবার আছড়ে পড়ছিল তোমার বুকে…. তবুও চোখের বাঁধভাঙা নোনা জল প্রাণপণে আটকাতে আটকাতে তুমি বলেছিলে…."এই পাগলী , একদম কাঁদবি না…হাসিখুশি থাকিস…তোকে হাসি মুখেই ভালো মানায়"!!!
তোমার ঐ শেষ কথাগুলো আর শেষ"পাগলী"ডাক টা বুকে এসে লেগেছিল খুব। দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দিচ্ছিল আমার সবকিছু…. আমাদের সবকিছু। জানি তোমারও বুকের ভেতরটা ফাঁকা হয়ে আসছিল, সারাক্ষণ লাগামহীন ভাবে বকবক করা ঠোঁট দুটি… নিশ্চুপ!!…. কথা জড়িয়ে আসছিল দুজনের, ঝাপসা হয়ে আসছিল লেম্প পোস্টের আলোটাও।
"ভুলে যাবে না তো???" উত্তরে তুমি বলেছিলে…"কলিজা তে রেখেছি…ভালোবাসা থেকে আটকাবো কি করে!!" অনেক চেষ্টা করেও আমি সেদিন" ভালোবাসি" বলতে পারিনি, মুখ থেকে শুধু বেরিয়ে এসেছিলো…." অপেক্ষায় থাকবো, ফিরে এসো সকলের চোখে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করে"" আর ফোনের ওপার থেকে শুনতে পেয়েছিলাম…."আমি তোমারও বিরহে রহিব বিলীন, তোমাতে করিব বাস, দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরষ মাস"" কথা শেষ করতে না চাইলেও অদ্ভুতভাবে ফোনের ব্যাটারি টাও সেদিন বাধ সেধেছিল , থমকে গেছিল call duration, থমকে গেছিলো তোমার নিশ্বাসের শব্দ!!
তারপর থেকে এতদিন হয়ে গেল তুমি আর যোগাযোগ রাখোনি আমার সাথে। একে অপরের প্রতি মায়া কাটাতে না পেরে যদি লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয় সেই ভয়ে।।
আমি জানি না তোমার, আমাকে মনে পড়ে কি না। কিন্তু তোমাকে ভুলে থাকা আমার দ্বারা হয়ে উঠলো না আজও। যোগাযোগ না থাকলেও,তুমি রয়ে গেছ আমার অভ্যাসে, বদঅভ্যাস, অন্যমনস্কতায় , আমার ব্যার্থতায়, আমার সফলতায় তুমি রয়ে গেছ।।
কাজল দিয়ে ঢাকতে চাওয়া, চোখের নিচের ওই কালসিটে দাগ টাই তোমার- আমার প্রেম টা আজও বড্ড স্পষ্ট দেখা যায়।। আমার না পাঠানো চিঠিতে, ঘুম ভাঙানো ভোরে আর পা ভেজানো প্রতিটা শিশির কনায় তোমার উপস্থিতি প্রতিনিয়ত।। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা হেডফোনের তারগুলো কে যখন ঠিক করি তখন মনে পড়ে সেই রাত …সেই বিচ্ছেদের রাত।।
তোমার আমার চেনা কোনো সন্ধ্যায় , যখন পছন্দের ফুল গুলি ঝড়ে পড়ে, তখন আমার হৃদয় আকাশে কালবৈশাখীর মত তুমি উন্মুক্ত হও, আমি দিশেহারা হয়ে ছুটে যায় তোমায় ছুঁতে, কিন্তু পায়না!!
হ্যাঁ…. এইভাবেই তোমাকে নিয়ে, তোমারই অপেক্ষা করে চলেছি প্রতি দিন, অপেক্ষা করছি তোমার ফিরে আসার…তোমার ছোয়া পাওয়ার। আমার বিশ্বাস তুমি আসবে…আসবেই……আমার"আমি"কে তোমার করে নিতে। হ্যাঁ এই বিশ্বাস ই আমায় বাঁচিয়ে রেখেছে, আর কানে বাজতে থাকা সেই গান
" আমারও পরান যাহা চায়, তুমি তাই গো, তুমি তাই"
✍️ #পাগলী ♥️

1 تعليقات

إرسال تعليق
أحدث أقدم

Recent Posts