বীর্য, কামরস ও সাদা স্রাব এর মধ্যে পার্থক্য

 


প্রশ্ন: আমি জানি না নারীদের থেকে নির্গত তরলকে কখন বীর্য ধরা হয়; যার ফলে গোসল ফরয হয়। আর কখন সেটাকে সাধারণ স্রাব ধরা; যার ফলে ওজু ফরয হয়। আমি একাধিকবার বিষয়টি জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেউ আমাকে যথাযথ জবাব দেয়নি। তাই আমি নির্গত সকল তরলকে সাধারণ স্রাব ধরি; যা বের হলে গোসল ফরয হয় না। আমি শুধু সঙ্গম করা ছাড়া গোসল করি না। আশা করব, আপনার এ দুটোর মধ্যকার পার্থক্য পরিস্কারভাবে উল্লেখ করবেন।

উত্তর:
আলহামদুলিল্লাহ।

নারীর জরায়ু থেকে নির্গত তরল হতে পারে বীর্য, হতে পারে মযী বা কামরস, হতে পারে সাধারণ স্রাব। এ তিনটির প্রত্যেকটির রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও প্রত্যেকটির রয়েছে স্বতন্ত্র বিধিবিধান।

বীর্য এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-

১। হলুদ রঙের পাতলা। এ বৈশিষ্ট্যটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে- 
“নিশ্চয় পুরুষের পানি ঘন সাদা। আর মহিলার পানি পাতলা ও হলুদ রঙের।”[সহহি মুসলিম (৩১১)]

২। বীর্যের গন্ধ গাছের মঞ্জরির মত। আর মঞ্জরির গন্ধ ময়দার খামিরের কাছাকাছি।

৩। সুখানুভূতির সাথে বের হওয়া এবং বের হওয়ার পর যৌন নিস্তেজতা আসা।

এ তিনটি বৈশিষ্ট্য একত্রে পাওয়া শর্ত নয়। বরং একটি পাওয়া গেলেই সে তরলকে বীর্য হিসেবে সাব্যস্ত করা হবে। ইমাম নববী তাঁর ‘আল-মাজমু’ নামক গ্রন্থে (২/১৪১) এ কথা বলেছেন।

কামরস:

সাদা স্বচ্ছ পিচ্ছিল পানি। যৌন উত্তেজনার সময় এটি বের হয়; যৌন চিন্তার ফলে কিংবা অন্য কোন কারণে। এটি বের হওয়ার সময় সুখানুভূতি হয় না এবং এটি বের হওয়ার পর যৌন নিস্তেজতা আসে না।

সাদা স্রাব:

গর্ভাশয় থেকে নির্গত পদার্থ, যা স্বচ্ছ। হতে পারে এটি বের হওয়ার সময় নারী টেরও পায় না। এক মহিলা থেকে অপর মহিলার ক্ষেত্রে এটি বের হওয়ার পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।

পক্ষান্তরে, এ তিনটি তরল (বীর্য, কামরস ও স্রাব) এর মাঝে হুকুমগত দিক থেকে পার্থক্য হচ্ছে-

বীর্য পবিত্র। বীর্য কাপড়ে লাগলে সে কাপড় ধোয়া ফরয নয়। তবে, বীর্য বের হলে গোসল ফরয হয়; সেটা ঘুমের মধ্যে বের হোক কিংবা জাগ্রত অবস্থায়; সহবাসের কারণে বের হোক কিংবা স্বপ্নদোষের কারণে কিংবা অন্য যে কোন কারণে।

আর কামরস বা মযী নাপাক। এটি শরীরে লাগলে ধুয়ে ফেলা ফরয। কাপড়ে লাগলে কাপড় পবিত্র করার জন্য পানি ছিটিয়ে দেয়া যথেষ্ট। কামরস বের হলে ওজু ভেঙ্গে যাবে। কামরস বের হওয়ার কারণে গোসল ফরয হয় না।

পক্ষান্তরে, স্রাব পবিত্র। এটি ধৌত করা কিংবা কাপড়ে লাগলে সে কাপড় ধৌত করা আবশ্যক নয়। তবে, এটি ওজু ভঙ্গকারী। তবে এটা যদি চলমানভাবে বের হতে থাকে তাহলে সে মহিলা প্রত্যেক নামাযের জন্য ওয়াক্ত হওয়ার পর নতুন করে ওজু করবে। ওজু করার পর স্রাব বের হলেও কোন অসুবিধা নেই।


আল্লাহই ভাল জানেন।


সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Recent Posts