রাসূল অবমাননার পরিণাম ও শাস্তি: আমাদের করণীয়

 



রাসূল অবমাননার পরিণাম ও শাস্তি: আমাদের করণীয়

إن الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وعلى آله وصحبه أجمعين أما بعد:
আল্লাহ তাআলা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে রাসূল প্রেরণ করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ব মানবগোষ্ঠীর জন্য সর্বশেষ রাসূল। তিনি সকল জনগোষ্ঠীর জন্য প্রেরিত নবী। আরবী, অনারবী, সাদা-কালো সবার জন্য তিনি নবী ও রাসূল। তিনি সকল নবী ও রাসূলেরও নেতা। আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿لَقَدۡ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ بَعَثَ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡ أَنفُسِهِمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُواْ مِن قَبۡلُ لَفِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٍ ١٦٤ ﴾ [ال عمران: ١٦٤]
“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেনযখন তিনি তাদের মধ্য থেকে তাদের প্রতি একজন রাসূল পাঠিয়েছেনযে তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়। যদিও তারা ইতঃপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল।” [সূরা আলে ইমরান: ১৬৪] 
বর্তমানে বিভিন্নভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবমাননা করা হচ্ছেঅথচ আমরা জানি না যেএর পরিণাম কত ভয়াবহ। এ বিষয়ে আমাদের সঠিক জ্ঞান থাকা খুবই জরুরী। আলোচ্য প্রবন্ধে  রাসূলুল্লাহ সা. এর অবমাননার পরিণাম ও শাস্তি সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:

রাসূলুল্লাহর সম্মান ও মর্যাদা

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করেছেন। তাই ইচ্ছা করে তার মর্যাদা কেউ বাড়াতে বা কমাতে পারবে না। তারা নবীকে নিয়ে যতই কটূক্তি এবং অবমাননা করেছে আল্লাহ ততই তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। আল্লাহ্ বলেন,
﴿ وَرَفَعۡنَا لَكَ ذِكۡرَكَ ٤ ﴾ [الشرح: ٤]
আর আমরা আপনার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি।” [সূরা আল-ইনশিরাহ-৪)। 
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের  আযানে বিশ্বব্যাপী মসজিদে মসজিদে তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। মুয়াজ্জিন ঘোষণা দিচ্ছে,
«أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ»
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্) আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।” 

নিম্নে তার সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো: 
 
এক . উত্তম চরিত্র ও মাধুর্যপূর্ণ আচরণের অধিকারী
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন উত্তম চরিত্র ও মাধুর্যপূর্ণ আচরণের অধিকারী। এ বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই প্রশংসা করে বলেন
﴿ وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ ٤ ﴾ [القلم: ٤]
আর অবশ্যই তুমি মহান চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত। [সূরা আল-কালাম: ৪]। 
অনুরূপভাবে আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّمَا بُعِثْتُ لأُتَمِّمَ مَكَارِمَ الأَخْلاَقِ»
নিশ্চয় আমি মহৎ চারিত্রিক গুণাবলীর পূর্ণতা দান করার উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়েছি।” [সুনান বায়হাকী: ২০৫৭১]
দুই. তিনি বিশ্ববাসীর জন্য রহমাত স্বরূপ
আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শুধু মানবমণ্ডলী নয় সকল সৃষ্টিকুলের জন্যই রহমাত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,   
﴿ وَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ إِلَّا رَحۡمَةٗ لِّلۡعَٰلَمِينَ ١٠٧ ﴾ [الانبياء: ١٠٧]
আর আমি তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্যে কেবল রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।” [সূরা আম্বিয়া:১০৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي صَالِحٍ قَالَ  كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُنَادِيهِمْ «يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّمَا أَنَا رَحْمَةٌ مُهْدَاةٌ»
আবু সালেহ বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডেকে বলতেন, “নিশ্চয় আমি উপহার স্বরূপ প্রদত্ত রহমত বিশেষ।” [মুসতাদরাক লিল-হাকিম: ১০০]
তিন. তিনি শেষ নবী 
তাঁর বৈশিষ্ট্যের অন্যতম একটি দিক হচ্ছেতিনি হচ্ছেন নবী পরস্পরা পরিসমাপ্তকারী-শেষ নবী। তারপর আর কোনো নবী আসবেন না। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেন,  
﴿ مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَآ أَحَدٖ مِّن رِّجَالِكُمۡ وَلَٰكِن رَّسُولَ ٱللَّهِ وَخَاتَمَ ٱلنَّبِيِّ‍ۧنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ بِكُلِّ شَيۡءٍ عَلِيمٗا ٤٠ ﴾ [الاحزاب: ٤٠]
মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা ননবরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আর আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।” [সূরা আল-আহযাব: ৪০]
চার. সকল নবী-রাসূলদের উপর তাঁকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে
যুগে যুগে যেসব নবী ও রাসূল আগমন করেছেন তাদের উপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«فُضِّلْتُ عَلَى الأَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وَأُحِلَّتْ لِىَ الْغَنَائِمُ وَجُعِلَتْ لِىَ الأَرْضُ طَهُورًا وَمَسْجِدًا وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً وَخُتِمَ بِىَ النَّبِيُّونَ»
ছয়টি দিক থেকে সকল নবীদের উপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। আমাকে জাওয়ামি‘উল কালিম তথা ব্যাপক অর্থবোধক সংক্ষিপ্ত বাক্য বলার যোগ্যতা দেওয়া হয়েছেআমাকে ভীতি (শত্রুর অন্তরে আমার ব্যাপারে ভয়ের সঞ্চার করা) দ্বারা সাহায্য করা হয়েছেগনীমতের মাল (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) আমার জন্যে বৈধ করা হয়েছেআমার জন্যে সকল ভূমিকে পবিত্র ও সিজদার উপযুক্ত করা হয়েছেআমি সকল মানুষের তরে প্রেরিত হয়েছি এবং আমার মাধ্যমে নবুওয়ত পরস্পরা শেষ করা হয়েছে। [সহীহ মুসলিম: ১১৯৫]
পাঁচ. তাঁকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসা ঈমানের দাবী
যে ব্যক্তির মধ্যে রাসূলের ভালবাসা থাকবে নাসে কোনো দিন মুমিন হতে পারবে না। এমনকি নিজের জীবন

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Recent Posts