যেসব কাজে নামাজ ভেঙে যায়
(১) নামাজে অশুদ্ধ পড়া। নামাজের ভেতর কিরাতে যদি এমন পরিবর্তন হয়, যার ফলে কোরআনের অর্থ ও উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ পাল্টে যায়, তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে, আবার তা আদায় করা ওয়াজিব হবে। ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬৩৩-৬৩৪, ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি ১/৮০, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত : ৩/৩৪৪)
(২) নামাজের ভেতর কথা বলা। নামাজে এমন কোনো অর্থবোধক শব্দ করা, যা সাধারণ কথার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (হোক সেটা এক অক্ষর বা দুই অক্ষরে ঘটিত) তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬১৩, আল বাহরুর রায়িক : ২/২)
(৩) কোনো লোককে সালাম। নামাজরত অবস্থায় কোনো লোককে সালাম দিলে নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/৯২, আল বাহরুর রায়িক : ২/১২০)
(৪) সালামের উত্তর দেওয়া। নামাজরত অবস্থায় কারো সালামের উত্তর দেওয়া নামাজ ভঙ্গকারী কাজ। (বুখারি, হাদিস : ১২১৭)
(৫) উঃ, আঃ শব্দ করা। নামাজরত অবস্থায় কোনো ব্যথা কিংবা দুঃখের কারণে উঃ, আঃ শব্দ করলে নামাজ ভেঙে যাবে। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/৬১৯, আল বাহরুর রায়িক : ২/৪, মারাকিল ফালাহ : ১/১২১)
(৬) বিনা ওজরে কাশি দেওয়া। অপ্রয়োজনে কাশি দেওয়ার দ্বারাও নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৩/৬১৮, মারাকিল ফালাহ : ১/১২১)
(৭) আমলে কাসির করা। ফিকাহবিদরা আমলে কাসিরের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। তন্মধ্যে বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য মত হলো, কোনো মুসল্লির এমন কাজে লিপ্ত হওয়া, যার কারণে দূর থেকে কেউ দেখলে তার মনে প্রবল ধারণা জন্মে যে ওই ব্যক্তি নামাজরত নয়। (ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত : ৩/৪৮৫, ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬২৪-৬২৫, বায়েউস সানায়ে : ১/২৪১)
(৮) বিপদে কিংবা বেদনায় শব্দ করে কাঁদা। দুনিয়াবি কোনো বিপদাপদ কিংবা দুঃখের কারণে শব্দ করে কাঁদলে নামাজ ভেঙে যায়। (হাশিয়াতু তাহতাবি : ১/৩২৫, ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬১৯, নূরুল ইজাহ, পৃ. ৬৮)
(৯) তিন তাসবিহ পরিমাণ সতর খুলে থাকা। (আবু দাউদ : ৬৪১, তিরমিজি : ৩৭৭, ইবনে মাজাহ : ৬৫৫)
(১০) মুক্তাদি ছাড়া অন্য ব্যক্তির লোকমা (ভুল সংশোধন) লওয়া। যেমন—ইমাম কিরাতে ভুল করছেন, সঙ্গে সঙ্গে নামাজের বাইরের কোনো লোক লোকমা দিলে তা গ্রহণ করা। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬২২, ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ১/৯৮)
(১১) সুসংবাদ বা দুঃসংবাদে উত্তর দেওয়া। সুসংবাদ অথবা দুঃসংবাদের উত্তর দেওয়া দুনিয়াবি কথার শামিল। তাই এর দ্বারা নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৬১৩, আল বাহরুর রায়িক : ২/২)
(১২) নাপাক জায়গায় সিজদা করা। নামাজের জায়গা পবিত্র হওয়া জরুরি। অর্থাৎ নামাজ পড়ার সময় নামাজি ব্যক্তির শরীর যেসব জায়গা স্পর্শ করে সে জায়গাগুলো পবিত্র হওয়া নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য অপরিহার্য শর্ত। তাই নাপাক বা অপবিত্র জায়গায় সিজদা করলে নামাজ ভেঙে যাবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/১১৫, আল বাহরুর রায়িক : ২/৩৭, তাবয়িনুল হাকায়েক : ১/৯৫)
(১৩) কিবলার দিক থেকে সিনা ঘুুরে যাওয়া। কোনো কারণে কিবলার দিক থেকে সিনা (বুক) ঘুরে গেলে নামাজ ভেঙে যায়। তবে যানবাহনে নামাজের ক্ষেত্রে মাসআলা ভিন্ন। (মারাকিল ফালাহ : ১/১২১, নূরুল ইজাহ : ১/৬৮)
(১৪) নামাজে কোরআন শরিফ দেখে পড়া। নামাজরত অবস্থায় কোরআন শরিফ দেখে দেখে পড়লে নামাজ ভেঙে যায়। (মারাকিল ফালাহ : ১/১২৪, হাশিয়াতুত তাহতাবি : ১/৩৩৬)
তবে সৌদি আরবের আলেমরা এ মাসআলার ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করেন।
(১৫) নামাজে শব্দ করে হাসা। নামাজে শব্দ করে অট্টহাসি দিলে অজুসহ ভেঙে যায়। (কানযুদ্দাকায়েক : ১/১৪০)
(১৬) নামাজে সাংসারিক কোনো বিষয় প্রার্থনা করা। নামাজরত অবস্থায় সাংসারিক/দুনিয়াবি কোনো দোয়া করলে হানাফি মাজহাব মতে নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতায়ায়ে শামি : ১/৬১৯, আল বাহরুর রায়িক : ২/৩)
তবে এ মাসআলার ক্ষেত্রে অন্য মাজহাবের ভিন্নমত আছে।
(১৭) হাসির জবাব দেওয়া। নামাজরত অবস্থায় কারো হাসির (উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বললে) উত্তর দেওয়া কথা বলার নামান্তর। এর দ্বারা নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/১১৭)
(১৮) নামাজে খাওয়া ও পান করা। (মারাকিল ফালাহ : ১/১২১, নূরুল ইজাহ : ১/৬৮)
(১৯) ইমামের আগে মুক্তাদি দাঁড়ানো। মুক্তাদির পায়ের গোড়ালি ইমামের আগে চলে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। তবে যদি (দুজন জামাতের সঙ্গে নামাজের ক্ষেত্রে) মুক্তাদি ইমামের পায়ের গোড়ালির পেছনেই দাঁড়ায়; কিন্তু তিনি লম্বা হওয়ার কারণে তাঁর সিজদা ইমামকে অতিক্রম করে যায়, তাহলে তাঁর নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/১৫৯, আল মাবসুত লিস সারাখসি : ১/৪৩)